কক্সবাজারে বাড়ছে অপরাধ, প্রতি মাসে অর্ধশত ছিনতাই

তারেকুর রহমান •

অব্যবস্থাপনা ও কঠোর নজরদারির অভাবে কক্সবাজার শহরে চুরি-ছিনতাই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শহরের অলিগলিতে মাসে ২৫ থেকে ৩০টি বড় বড় ছিনতাইয়ের ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। দিনের পর দিন বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি চাকরিজীবী পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না ছিনতাইয়ের কবল থেকে।

ছিনতাইয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে জনসাধারণ মনে করছেন শহরের বিভিন্ন মোড়ে বৈদ্যুতিক বাতি নেই। কিছু কিছু মোড়ে বাতির ব্যবস্থা থাকলেও অকেজো হয়ে গেছে। শহরের কয়েকটি স্থান- কালুর দোকানের কচ্ছপিয়া পুকুরপাড় থেকে লাইট হাউস সড়ক, আলীর জাঁহাল এসএম পাড়া সড়ক, হাশেমিয়া মাদ্রাসাস্থ রাস্তার দুপাশের এলাকা।

রুমালিয়ারছরা থেকে দুই বিপরীতমুখী সড়ক দক্ষিণ রুমালিয়ারছরা ও উত্তর রুমালিয়ারছরা, তারাবনিয়ারছরা পুরাতন কমার্স কলেজ সড়ক, টেকপাড়া, বাহারছড়া চত্বর থেকে বাহারছড়া বাজার, মোহাজের পাড়া, গোলদিঘীর পাড়স্থ বৈদ্যঘোনা, ঘোনাপাড়া, খাঁজা মঞ্জিল প্রভৃতি সড়কে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা নেই। কিছু কিছু সড়কে বাতি থাকলেও বেশির ভাগ অকেজো। সড়কগুলো রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকে। ওই সড়ক সমূহে প্রতিদিন চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাই থেকে রেহাই মিলছে না নারীদেরও।

কয়েকদিন আগে (২ জুন) শহরের রহমানিয়া মাদ্রাসা এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট পারভীন সুলতানা। অফিসে যাওয়ার সময় রহমানিয়া মাদ্রাসা সড়কে সিকদার বাড়ির সামনে তার উপর হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে ছিনতাইকারীরা।

১১ জুন সকালে টেকপাড়ায় ছিনতাইয়ের শিকার হন কক্সবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহানের পুত্রবধূ। মেয়েকে প্রাইভেটে দিয়ে আসার সময় টেকপাড়া এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি।

যানবাহন চালকরা জানান, ‘ গাড়ি চলন্ত অবস্থায় ছিনতাইকারীরা অনেক সময় পথ অবরোধ করে আমাদেরকে থামতে বলে, না থামলে গাড়িতে আঘাত করে থামিয়ে আমাদের মারধর করে। ভাঙ্গা সড়কে সারাদিন গাড়ি চালিয়ে যা পাই সব ছিনিয়ে নেয়। এসব ছিনতাইকারীর কবল থেকে রক্ষা পায় না আমাদের গাড়ির যাত্রীরাও। তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, হাতঘড়ি, আংটি, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে ফেলে অস্ত্র ঠেকিয়ে।

ইজিবাইক (টমটম) চালক রবিউল আলম বলেন, ‘দক্ষিণ রুমালিয়ারছরার উপসড়কগুলোতে টমটম নিয়ে ঢুকতে ভয় করে। দিনদুপুরে কিশোর গ্যাং তথা বখাটে যুবকরা টাকা কেড়ে নেয়। একটু অন্ধকার হলেই যাত্রীদের কাছ থেকেও টাকা পয়সার পাশাপাশি মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় তারা। যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় পথে সুতা টাঙ্গিয়ে অভিবন কৌশলে ছিনতাই করে তারা। তাদের প্রত্যেকের পকেটে ও কোমড়ে ছুরি ও অস্ত্র থাকে। এগুলো বের করে আমাদের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। প্রতিদিন ওই রোড দিয়ে গাড়ি চালাতে হয় বলে ভয়ে মুখও খুলতে পারিনা। বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতি ও হুমকি দেয় তারা। এভাবে অনেক কষ্ট ও অত্যাচারে দিন যাপন করছি।’

সচেতন মহলের দাবি- রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় সড়কড়গুলো খানাখন্দকে ভরা পানি জমে থাকে, জমে থাকে কাদার স্তর ফলে গাড়ি ধীরে চালাতে হয়। আর এমন পরিবেশ পেয়ে ছিনতাইকারীরা সুযোগ বুঝে চালক ও যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় টাকা পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র।
ছিনতাই ও ছিনতাইকারীর হাত থেকে নিরাপত্তা চেয়ে ওইসব এলাকায় যাতায়াত করা লোকজন, চালক ও এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজকেও (১১ জুন) এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীর সর্দার রেদুয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও সালমান শাহ, আবছার, সম্রাটসহ শহরের বড় বড় সন্ত্রাসী গডফাদাররা আমার হাতে ধরা পড়েছে। এই অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ও অলিগলিতে তাদের বিচরণ। আমরা পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখছি। এই শহরে কোনো ছিনতাইকারী, চুর ও খুনীরা পার পাবে না। অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আসতে হবে।’

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেও শহরের জেলখানা সংলগ্ন মাজিয়াতলী এলাকায় দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ২ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় শহরের টেকপাড়া এলাকার মুজিবুল ইসলামের পুত্র মোহাম্মদ সাহেদ (২৮) ও বাঁচা মিয়া ঘোনা এলাকার নুরুল আলমের পুত্র রায়হানুল ইসলাম (২৫) গোলাগুলিতে মারা যায়।